------------------------------------
সর্ব প্রথম যখন ইবনে বতুতার নাম শুনি তখন বোধহয় কেবল প্রাইমারি শেষ করেছি অথবা করব করব ভাব।তাও সে সময়টা আজ হতে নূন্যতম ১৩/১৪ বছর আগের সময়।তখন শুধু জানতাম ইবনে বতুতা ছিলেন একজন বিখ্যাত পর্যটক।অবশ্য বিখ্যাত মানে কি তাও বোধহয় ভালোভাবে জানতাম কিনা সন্দেহ আছে।শুধু এটা মুখস্ত করে এসেছি যে, তিনি যখন বাংলায় আসেন তখন ১ টাকায় আট মন চাল,৩ টাকায় দুধেল গাভী ইত্যাদি পাওয়া যেত।শায়েস্তা খানের আমলের এই সস্তা জিনিস পত্রের দাম একমাত্র ইবনে বতুতার বর্ননা থেকেই জানা যায়।তাই এই সস্তার কথা মনে হলেই ইবনে বতুতার কথা মনে পড়ে যেত।যাই হোক,
পরবর্তিতে হাই স্কুলের সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে যৎসামান্য পরিমানে এই বিখ্যাত পর্যটক সম্পর্কে জানতে পারি।তখন অবশ্য "পর্যটক" এবং "বিখ্যাত" দুইটা শব্দের মানেই ভালোভাবে বুঝতাম।
তারপর, অনার্সে এসে যখন ইতিহাসে অনার্স করছি তখন এসব পরিব্রাজক(পর্যটক) সম্পর্কে না জানলে কি আর হয়? এখন মার্কো পোলো,ফা হিয়েন এর সাথে সাথে বিখ্যাত এই পরিব্রাজক সম্পর্কে জানতে হয়।তবে ভারতীয় উপমহাদেশের বর্ননা পড়তে গেলে সবার আগে আসে ইবনে বতুতার নাম।
ইরান, ইরাক , কাজাকিস্তান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ,
মালদ্বীপ , ভারত, বাংলাদেশ , শ্রীলংকা, দক্ষিণ-পূর্ব
এশিয়া এবং চীন ভ্রমণ করেছিলেন।তিনি সম্ভবত ১৩৪৬ সালে বাংলায় ভ্রমন করেন।এবং
তিনি তার এ ভ্রমন কাহিনী তার বিখ্যাত গ্রন্থ "রেহলা" তে লিপিবদ্ধ করেন।আমি আগেই বলেছি, যে এটি বাংলার এবং ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসের অন্যতম প্রধান উৎস।
________
মরোক্কের বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতার ভ্রমনকাহিনী সম্বলিত গ্রন্ত "রেহলা"।
ইবনে বতুতা তার ৩০ বছরের বিশ্ব ভ্রমনের অভিজ্ঞতা এই গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন। তবে ইবনে বতুতা তার অভিজ্ঞতার বিবরন নিজে লিপি বদ্ধ করেন নি বলে জানা যায়। যতদুর সম্ভব ইবনে জুজাই নামক এক পন্ডিত যিনি মরক্কো সুলতানের ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন তিনিই সুলতানের নির্দেশে শ্রুতি লিখন পদ্ধতিতে ইবনে বতুতার ভ্রমন কাহিনী লিপিবদ্ধ করেন।
১৩৫৫ সালের ৯ই ডিসেম্বর মৌখিক
বর্ননা শেষ হলে “রিহলা” নামক বইটি লিপিবদ্ধ করার
কাজ শেষ হয়। রিহলা কথাটির সারমর্ম হল “মুসলিম
সম্রাজ্য, এর সৌর্য, শহর এবং এর গৌরবান্বিত পথের
প্রতি উৎসাহিদের জন্য একটি দান” (A Gift to
Those Who Contemplate the Wonders of Cities
and the Marvels of traveling”
এ গ্রন্থে আফ্রিকা,মিশর, চীন সহ ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক বিবরন অত্যান্ত সুন্দর ভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
বিশেষ করে বাংলার ইতিহাসে "রেহলা" গ্রন্থের ভূমিকা অনবদ্য।
বিদেশি পর্যটকদের বিবরণে
শূণ্যতা কিছুটা পূরণ করেছে। এগুলির মধ্যে বিশেষত বাংলার সামাজিক,অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস পুনর্গঠনের জন্য ইবনে বতুতা, মা হুয়ান ,
ভার্থেমা, ও বারবোসা র বিবরণ
গুরুত্বপূর্ণ। ইবনে বতুতা তাঁর ভ্রমণবৃত্তান্তে (রেহলা) তৎকালীন
বাংলার (১৩৪৬-৪৭) রাজনৈতিক,
অর্থনেতিক ও সামাজিক অবস্থার
উল্লেখ করেছেন। রাজনৈতিক
ঘটনাবলি সম্পর্কে তাঁর বহু তথ্য ভুল প্রমাণিত হলেও সামাজিক ও
অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে তাঁর বিবরণ অত্যন্ত মূল্যবান। তিনি যে এলাকা সফর করেছেন সেখানে নিজেই তিনি দোকান ও বাজারে গিয়েছেন এবং বিভিন্ন পণ্যের মূল্য লিপিবদ্ধ করেছেন।তার বিবরন হতেই তৎকালীন সময়ে টাকায় আট মন চাল,৩ টাকায় দুধেল গাভী ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারি।
সুতরাং বলা যায় বাংলার ইতিহাসের একটি অন্যতম প্রধান ঊৎস "রেহলা " গ্রন্থ খানি।